দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা
- আপলোড সময় : ০১-০১-২০২৫ ১২:২৭:১০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০১-০১-২০২৫ ১২:২৭:১০ পূর্বাহ্ন
আশিস রহমান ::
তিন সন্তানের জননী রুবি আক্তার। অভাবের সংসারে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় হতদরিদ্র কৃষক স্বামী তাহের মিয়ার সাথে তিনিও আপ্রাণ জীবন সংগ্রামে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন সমানতালে। কিন্তু কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি। একদিকে সংসারের খরচ অন্যদিকে সন্তানদের ভরণপোষন ও পড়াশোনা। তিনবেলা নুন আনতেই পান্তা ভাত ফুরানোর মতো অবস্থা ছিলো রুবি-তাহের দম্পতির। এমন দুরাবস্থায় হঠাৎ একদিন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি)-এর ভলান্টিয়াররা বাড়িতে এসে জরিপ চালিয়ে হতদরিদ্র হিসেবে রুবি আক্তারের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তাদের উপকারভোগী সদস্য তালিকায়। পরবর্তীতে এই সংস্থার কাছ থেকে দুই ধাপে ৪৫০০ টাকা করে মোট নয় হাজার টাকা নগদ আর্থিক অনুদান পান রুবি। পরবর্তীতে এই টাকা থেকে ২ হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করে বাকি ৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন তিনি। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রুবি আক্তারকে। বর্তমানে স্বামীর কৃষিকাজে সহযোগিতার পাশাপাশি বাড়িতে বসে সেলাইয়ের কাজ করে বাড়তি টাকা আয় করছেন তিনি। এই টাকা দিয়ে দিয়ে তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচসহ সাংসারিক আনুষাঙ্গিক খরচের ব্যয় নির্বাহ করছেন রুবি।
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা তাহের মিয়ার স্ত্রী রুবি আক্তার শুধু একাই নন, তারমতো উপজেলার হতদরিদ্র ২৫০০ উপকারভোগী সদস্য এফআইভিডিবি’র আর্থিক সহযোগিতায় এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
রুবি আক্তার বলেন, তিন বছর আগে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। কিন্তু টাকার অভাবে এতোদিন ধরে সেলাই মেশিন কিনতে পারিনি। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো বাড়িতে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করব। এফআইভিডিবি’র আর্থিক অনুদানে আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি এখন বাড়িতে বসেই সেলাইয়ের কাজ করে বাড়তি ইনকাম করতে পারছি।
একই গ্রামর বাসিন্দা রবিউলের স্ত্রী চার সন্তানের জননী তাছলিমা বেগম বলেন, এফআইভিডিবি’র মাধ্যমে আমিও দুই ধাপে নয় হাজার টাকা নগদ আর্থিক অনুদান পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে আমার গর্ভকালীন চেকআপ ও চিকিৎসার কাজে ব্যয় করছি। পরবর্তীতে সিজারে আমার দুই জমজ শিশু সন্তানের জন্ম হয়। সন্তানের চিকিৎসার খরচ যোগাতে পারছিলাম না। এসময় আবারও পাশে দাঁড়ায় এফআইভিডিবি। এফআইভিডিবি’র মাধ্যমে ৩৬০০ টাকা করে দুইধাপে মোট ৭২০০ টাকা নগদ আর্থিক অনুদান পেয়ে পুষ্টিকর খাবার ক্রয় ও দুই জমজ শিশুর চিকিৎসার কাজে ব্যয় করেছি।
বুধবার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের শরীফপুর, ইসলামপুর, ভূজনা, কদমতলী, নূরপুর, সোনাপুর ও বৈঠাখাই গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে এফআইভিডিবি’র অন্তত ৫০ উপকারভোগী সদস্যের সাথে কথা হয়। তাঁরা জানান, এফআইভিডিবি’র আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি শাকসবজির বীজ, স্বাস্থ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়ে উপকৃত হয়েছেন তাঁরা।
উপজেলা এফআইভিডিবি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিদেশী দাতা সংস্থা এসিএফ-এর অর্থায়নে ও বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোগ্রাম সিডা পিবিএ-এর আওতায় এফআইভিডিবি দোয়ারাবাজার উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের ২৫০০ জন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উপকারভোগীর মধ্যে নগদ অর্থ, অপুষ্ট শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলাদের আর্থিক সহায়তা, স্যানিটেশন-ওয়াস সাপোর্ট সহ নানাবিধ সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে প্রশিক্ষণের আয়োজন বাস্তবায়ন করে।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, দোয়ারাবাজারের মতো পিছিয়ে পড়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোপ্রবণ উপজেলায় এফআইভিডিবি’র কার্যক্রম প্রশংসনীয়। তাদের এই কার্যক্রম আরো বাড়ানো উচিত। এতে আমাদের উপজেলার হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, এফআইভিডিবি যেভাবে পুষ্টিহীন শিশু ও হতদরিদ্র মানুষদের নিয়ে একেবারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেছে এতে প্রকৃত অপুষ্ট শিশু ও দরিদ্ররা উপকৃত হয়েছে। আমার মনে হয় দোয়ারাবাজারের মতোন দুর্গম ও পশ্চাৎপদ উপজেলায় তাদের কার্যক্রম আরো জোরদার করা উচিত।
এসিএফ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মইনুল ইসলাম বলেন, দাতা সংস্থার অর্থায়ন ও আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা দোয়ারাবাজারের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছি। আমি আশাবাদী আগামীতেও এধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এফআইভিডিবি’র উপজেলা কো-অর্ডিনেটর সুশান্ত কুমার দাশ বলেন, আমরা একবছর মেয়াদী কার্যক্রম ইতোমধ্যে সফলভাবে স¤পন্ন করেছি। আমরা আশাবাদী ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়নে সংস্থাগুলো আগামীতেও এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ